বলা হয়ে থাকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় হ্যাকাথন গুলোর অন্যতম একটি হলো " নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ "
শুরুতেই হ্যাকাথন বিষয়টি পরিষ্কার করা যাক । হ্যাকাথন শব্দটি হ্যাক(hack)+ম্যারাথন(marathon) এই দুইটি ওয়ার্ড এর কম্বিনেশন । হ্যাকাথন হচ্ছে একটি অন-সাইট প্রতিযোগিতা, যেখানে প্রতিযোগীরা একটি লম্বা সময় ধরে কোনো একটি সমস্যার সমাধান বের করে এবং তা বাস্তবায়ন করারও চেষ্টা করে। এটি ২৪ ঘন্টা থেক শুরু করে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত হয়ে থাকে।
নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ ৩৬ ঘন্টার ছিলো। টপ ১১০টি প্রজেক্টের মধ্যে টপ ৫০টি প্রজেক্ট ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে (আইইউবি) , বাকি ৬০টি প্রজেক্ট অনলাইনে অংশগ্রহণ করে ।
৭ সেপ্টেম্বরে সেমিস্টার ফাইনাল শেষ হওয়ার ২ দিন রেস্ট নিয়ে ৯ সেপ্টেম্বর থেকে আমরা নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ ২০২২ এর জন্য প্রিপারেশন নিতে থাকি। পুরো সময় জুড়ে যে মানুষ টি আমাদের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম, মিটিং এর পর মিটিং এন্ড আমাদের কাজ দিয়ে বিজি রাখার ট্রাই করতো তিনি হলেন আমাদের হাসিব ভাই।
এবার টিম নিয়ে কিছু কথা বলা যাক। আমাদের টীম এ আমরা ছিলাম টোটাল ৫ জন মেম্বার। আমি , লাবিব , সুপ্তি , সোয়েব এন্ড রাকিব ভাই। আমাদের টীম এর নাম দেওয়া হয় ‘এক্সপেকটেশন জিরো’ । বেসিকালি প্রথম বারের মতো নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ এর মতো হ্যাকাথন এ পার্টিসিপেট করলে এক্সপেকটেশন জিরো থাকাটাই নরমাল। বাট প্রাইস সেরেমনি তে অবশ্য এক্সপেকটেশন হাই ছিল।
৩০.০৯.২০২২
সকাল ৭ টায় ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটিতে ক্যাফেটেরিয়ার সামনে ফুড টোকেন এন্ড টি শার্ট কালেক্ট করে আমরা এন্ট্রি করি মেইন স্পট। টেবিল সিলেকশন শেষে প্রয়োজনীয় সব ইকুইপমেন্ট বের করে আমরা রেডি হয়ে যায় আমাদের প্রজেক্ট এন্ড প্রেজেন্টেশন রেডি করতে । ১০ তার দিকে ব্রেকফাস্ট শেষে কিছুটা ব্রেক নিয়ে আবারো শুরু হয় আমাদের কাজ , চলতে থাকে ১২:৩০ টা পর্যন্ত। নামাজ বিরতি শেষে লাঞ্চ শেষে আবারো শুরু হয় প্রেজেন্টেশন ঘষা মাজার কাজ। বিকাল ৬ টায় ২৪০ সেকেন্ডস এর প্রেজেন্টেশন এর কাজ শেষ করে জমা দিয়ে আমরা রিলেক্স হই । এর মাঝেই স্নাক্স এর বিরতিতে চা কফি খেয়ে বডি ঠিক করে নেই। সন্ধ্যার পর আমরা কিছুটা রিলাক্স হয়ে আড্ডা এবিং ঘুরাঘুরি করতে থাকি। এখন আমাদের মূল কাজ ছিল ৩০ সেকেন্ডস এর ভিডিও এন্ড প্রজেক্ট রেডি করা। নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ এ অন-সাইটে ফুল প্রজেক্ট রেডি করার ধরা বাধা নিয়ম নেই। তাই আমরা আগে থেকেই আমাদের প্রজেক্ট কিছুটা এগিয়ে রাখি এবং বাকি কাজ অন সাইটে বসে করি। সন্ধ্যা শেষে রাত চলে এলো। রাতে কাজের ফাঁকে মিড্নাইট চলে এলো। মিডনাইট স্নাক্স নিয়ে আই ইউ বি আউটডোর এ সময় পার করি। ভোর হওয়ার আগ মুহূর্তে কিছুতেই চোখ খোলা রাখতে না পেরে চলে যাই কমন রুম এ খানিকটা ঘুমাতে।
০১.১০.২০২২
সকাল ৭ টায় লাবিব কে দিয়ে ৩০ সেকেন্ডস এর ভিডিও এর জন্য অডিও রেকর্ড করিয়ে রোলার কোস্টার এর গতিতে এডিটিং করতে বসি কারণ সকাল ৯ ছিল লাস্ট সাবমিশন। যদিও পরবর্তীতে এর টাইম অনেকটা বাড়ানো হয়। সমস্ত ডকুমেন্ট কিছুটা আগে রেডি থেকেও সুপ্তি এবং লাবিব সংযোজন বিয়োজন শেষে আমরা নাসার মেইন সাইট এ সব ডকুমেন্ট সাবমিট করি দুপুরের পর পরই। মেহেদী হাসান ফয়সাল স্যার আমাদের একজন মেন্টর ছিলেন। আমাদের ভুল গুলো ধরিয়ে দিয়ে বেটার প্রেজেন্টেশন এর জন্য যথেষ্ট হেল্প করেছেন। লাঞ্চ শেষে আমাদের আর তেমন কোনো কাজ ছিল না। এখন অপেক্ষা শুধু ফলাফল এর। সন্ধ্যা ৬ তার পর আইইউবি অডিটোরিয়াম এ চলে যাই । ৮ টার পর পর শুরু হয় বিজয়ী দল ঘোষণা । দলের সবাই টেনশন এ কাপাকাপি শুরু হয়ে যায়। আমি মোটামোটি কনফিডেন্স ছিলাম যেকোনো একটা অ্যাওয়ার্ড আসবে আমাদের। ফাইনালি আমাদের টীম এর নাম ঘোষণা করা হলো। সেই সুন্দর মুহূর্ত বলে প্রকাশ করা যাবে না। আরো ভালোলাগার মুহূর্ত ক্রিয়েট করে যখন এনএসইউ ইন্সেপশন থেকে আমরা ৩ দলই অ্যাওয়ার্ড পাই। সবার গ্রুপ ফটো শেষে সমাপ্ত ঘোষণা হয় এবারের নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ ২০২২।
সময় টা সব মিলিয়ে ৪০ ঘন্টা বাট এই অল্প সময়ে সুন্দর কিছু মানুষের সাথে পরিচয়। গ্রুপ ওয়ার্কের ভালো কিছু মোমেন্ট। সবকিছু মিলিয়ে অসাধারণ এক্সপেরিয়েন্স ছিল এই দুইদিন।
সবশেষে যারা ফেসবুকে , ইনস্টাগ্রামে এ আমাকে এবং পুরো টিম কে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।