২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩
বিকাল ৫ টা। বাসা থেকে উবার মটো কল করে ব্যাকপ্যাক নিয়ে বের হয়ে পড়ি কল্যাণপুর বাস স্ট্যান্ড এর দিকে। সন্ধ্যা ৭ টার শ্যামলী এস পি বিজনেস ক্লাস এর টিকেট কাটা ছিল। এক ঘন্টার মাঝেই জ্যাম পেরিয়ে পৌঁছে যাই কল্যাণপুর বাস স্ট্যান্ড। একটু আগেই বেরিয়ে পড়ার কারণ ছিল পাসপোর্ট এন্ড ভিসার ফটোকপি করে নিতে হবে। সমস্ত ফটোকপি শেষে শ্যামলী এস পি কাউন্টার খুঁজে ওয়েট করতে থাকি বাস এর জন্য। ৭ টার পর পরেই বাস চলে আসে এবং একই সাথে মুষলধারে বৃস্টি নেমে যায়। বাকি যাত্রী দের নিয়ে স্টাফ বাস রওনা দেয় আগারগাঁও থেকে সন্ধ্যা ৬ টার দিকে। বৃষ্টি জন্য জ্যাম এ আটকে থাকার কারণে স্টাফ বাস কল্যাণপুর পৌঁছে তিন ঘন্টা পর রাত ১০ টার দিকে। রাত ১০:৩০ এর দিকে বাস রওনা দেয় বুড়িমারী ল্যান্ড পোর্ট এর দিকে। ঢাকা থেকে ডাইরেক্ট শিলিগুড়ি এর বাস এর টিকেট কাটা ছিল শ্যামলীর। পুরো রাত বৃষ্টি দেখতে দেখতে সকাল ৮ টা ৩০ দিকে বুড়িমারী ল্যান্ড পোর্ট চলে আসি। শ্যামলী বাস এ আসার ফলে কাস্টমস এবং ইমিগ্রেশন এ তেমন কোনো প্রব্লেম ফেস করতে হয় নি। সুপারভাইজার আগে থেকেই সমস্ত যাত্রীর পাসপোর্ট , পাসপোর্ট ফটোকপি এবং ভিসা ফটোকপি রেখে দিয়েছিলো।
ইমিগ্রেশন ওয়েটিং রুম এ বেশ কিছুক্ষন বসে থেকে আমার নাম কল করলে জাস্ট ফটো তুলে বাংলাদেশী ইমিগ্রেশন কমপ্লিট করি। ইমিগ্রেশন শেষে রওনা হই ইন্ডিয়ান বর্ডার এর দিকে সেখানে লাগেজে চেক শেষে ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশন এর ওয়েট করি। এর মাঝে হালকা নাস্তা সেরে ফেলি। ফটো এন্ড ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে ইমিগ্রেশন কমপ্লেট করে দেরি না করে শ্যামলী বাস এ উঠে পড়ি শিলিগুড়ির উদ্দেশ্যে ।
মোটামোটি ২ ঘন্টার কিছুটা কম সময়ের মাঝেই শিলিগুড়ির চলে আসি। ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিয়ে লাঞ্চ করি ' এপারে বাংলা ' নামে বাঙালি একটা রেস্টুরেন্ট এ । এরই মাঝে ইন্ডিয়ান এয়ারটেল সিম কিনে আগে থেকে বুকিং করে রাখা ড্রাইভার সুৱাগ দাদা কে ফোন দিয়ে লোকেশন বলে দেই । সুৱাগ দাদা পুরো এই দার্জিলিং টুর এর প্রতিটা স্পট ঘুরে দেখাবে। কিছুটা টাইম নিয়ে সুৱাগ দাদা চলে আসেন গাড়ি নিয়ে। শুরু হয় দার্জিলিং এর প্রথম দিন।
শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং এর পুরো রোড মুগ্ধতার সাথে দেখতে দেখতে যাচ্ছিলাম। শিলিগুড়ি থেকে রওনা দেয়ার ঘন্টা এক পরেই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি নামতে শুরু করে। হালকা ঝিরি বৃষ্টিতে দার্জিলিং এর রোড এবং চারপাশের সৌন্দর্য মনে করি আরো বেশি বাড়িয়ে দিয়েছে। আশেপাশের সৌন্দর্যের পাশাপাশি এখানকার ড্রাইভার এবং বাইকারদের ড্রাইভিং স্কিল ও আমাকে মুগ্ধ করেছে। জিগজ্যাগ রোড বেয়ে আস্তে আস্তে যত উপরে উঠছি তত ঠান্ডা লাগতে শুরু করেছে।
বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা হতে শুরু করেছে। রোড এর ল্যাম্পপোস্ট এর সোডিয়াম বাতি , রাস্তার পাশের বাসা এবং শপ এর লাইট জ্বলছে। ব্যাগ থেকে ক্যামেরা বের করে গাড়ি থেকেই কিছু স্ট্রিট ফটো তুলতে থাকি। কেও ছাতা হাতে কাজে যাচ্ছে , কেওবা রেইনকোট পরে বাইকে।
চারিপাশে হিলস এর মাঝে যেন একটা সিটির ভাইব পেলাম। শিলিগুড়ি থেকে প্রায় চার্ ঘন্টা পর সন্ধ্যা ৭ টার পরপর দার্জিলিং হোটেল এর সামনে এসে নামি। হোটেল বুকিং ছিল ' Cherrywood Suites & Spa' ঠিক সোনার বাংলা হোটেল এর পাশেই। গাড়ি থেকে ব্যাকপ্যাক নামিয়ে হোটেলে বুকিং ডকুমেন্ট দেখিয়ে চেক ইন করে ফেলি। মোটামোটি শীত এ আমার হাড়কাঁপা অবস্থা। দ্রুত রুম এ এসে ফ্রেশ হয়ে হট শাওয়ার নিয়ে ঠান্ডার ক্লোথ পরে হালকা একটু রেস্ট নিতে থাকি। এরপর বেরিয়ে পড়ি স্ট্রিট ফোটোগ্রাফি এবং দার্জিলিং এর স্ট্রিট ফুড ট্রাই করতে। বাইরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি তাই ক্যামেরায় ঠিক ভাবে প্রটেকশন এবং রেইনকোট পরে বেরিয়ে পড়ি।
হাটতে হাটতে সরু পথ দিয়ে দার্জিলিং মল রোড চৌরাস্তায় চলে আসি। বৃষ্টির মাঝেও মানুষের কমতি নেই। কেও শপিং করছে , কেও স্ট্রিট খাবার খাচ্ছে , কেওবা চারপাশ ঘুরে দেখছে। ইউনিক কোনো ফুড আমার চোখে পরে নি। দার্জিলিং এর মোমোর কথা অনেক শুনছে উপন্যাস এবং মানুষের মুখে । তাই শুধু মোমো টেস্ট করে আবার হাটতে শুরু করি। রাত ১০ তার কাছাকাছি। হোটেল এর কাছেই একটা বাঙালি রেস্টুরেন্ট থেকে ডিনার সেরে ফেলি। ডিনার করে হেটে একটা টি ষ্টল থেকে মোটামোটি ৩ কাপ ডিফারেন্ট ফ্লেভার এর টি খাই। দার্জিলিং এর মোমো র প্রশংসা না করলেও এখানকার চা বেস্ট এটা মানতেই হবে।
১১ টায় হোটেল রুমে চলে আসি। সারাদিনের জার্নির ক্লান্তি একদম এ ফীল হচ্ছিলো না। রুমে এসে বাসার সবার সাথে কথা বলে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ি কারণ পর দিন সকালেই সাইট সিইং করবো ---
Tea Garden,
Tenzing Rock,
Himalayan Mountaineering Institute,
Japanese Temple Ropeway,
Batasia Loop,
Rock Garden ,
Ghum Monastery,
Batasia Loop,
Darjeeling Chiriyakhana