বেশ কিছু অন-ট্রেইল করার পর আমাদের অনেক দিনের ইচ্ছে ছিলো অফ-ট্রেইলে যাওয়ার। ফাইনালি আমরা এই সেমিস্টার ব্রেক কে কাজে লাগাই। অফ- ট্রেল হিসেবে আমরা সিলেক্ট করি থানচি-রুমা সার্কিট। আমাদের মেইন টার্গেট ছিল তিনটি স্পট জাদিপাই যাকে ঝর্ণার রাণী বলেই আমরা জানি , বাকলাই ওয়াটারফল যার হাইট প্রায় ৩৮০ ফুট এবং ডাবল-ফলস।
১৩.০৯.২০২২
রাতের বাসে ঢাকার কল্যাণপুর থেকে রওনা হই বান্দরবান এর উদ্দেশ্যে । স্লো বৃষ্টি থাকার কারণে খানিকটা লেট করেই পৌঁছাই বান্দরবান। সকালের নাস্তা শেষ করে বাসের ইঞ্জিনে বসে রওনা হই থানচি এর উদ্দেশ্যে সকাল ৮ টায় । চেকপোস্ট এর সমস্ত কাজ শেষে থানচি নেমে দুপুরের লাঞ্চ শেষ করে অপেক্ষা করি গাইড এর । থানচি থেকে চাঁদের গাড়িতে বিকালে বাকলাই পাড়ার দিকে রওনা দেয়। পাহাড়ি আঁকা-বাঁকা, উঁচু নিচু রাস্তায় গাড়ির ঝাঁকির সাথে উপভোগ করছিলাম চারপাশের অপরূপ সৌন্দর্যের দিকে। মাঝপথে খানিকটা গাড়ির তেল শেষ হওয়ায় আমরা অপেক্ষা করছিলাম আরেকটা গাড়ির। এদিকে ঝিরি ঝিরি বৃষ্টি খানিক ভালো লাগার অনুভব দিচ্ছিলো। আনুমানিক ৫ টার দিকে পৌঁছাই গাড়ির শেষ গন্তব্যে যেখান থেকে আমাদের ট্রেকিং শুরু।
গাড়ি থেকে নেমে আমরা শুরু করি আমাদের ট্রেকিং , উদ্দেশ্যে থাইক্ষ্যং পাড়া। খানিকটা পথ ট্রেকিং শেষে আমরা পৌঁছাই বাকলাই পাড়ায়। অসম্ভব সুন্দর একটি পাড়া। মন চাচ্ছিলো কিছুটা সময় নিয়ে ঘুরে দেখার। বাট আমাদের পারি দিতে হবে বহু দূর আর এদিকে সন্ধ্যা নামার কাছাকাছি তাই কোনো ভাবেই সময় নষ্ট না করে আলো থাকতেই যতটা পথ পারি দেওয়া যাবে আমাদের জন্য মঙ্গোল। প্রায় ৪ ঘন্টার মতো কাদা মাটিতে ট্রেকিং এবং জোককে রক্ত দানের মাদ্ধমে আমরা পৌঁছে যাই থাইক্ষ্যং পাড়ায় , রাত প্রায় ৯:৪৫। ফ্রেশ হয়ে রাতের খাবার সেরে ক্লান্ত শরীরে আমরা আমাদের প্রথম দিনের সমাপ্ত করি।
১৫.০৯.২০২২
সকালে ঘুম ভাঙ্গে কিছুটা দেরিতে। ফ্রেশ হয়ে সকালের নাস্তা সেরে বেরিয়ে পড়লাম জাদিপাই ঝর্ণা দেখার উদ্দেশ্যে। আজকের দিনের জন্য আমাদের প্ল্যান ছিল জাদিপাই ঘুরে দ্রুত থাইক্ষ্যং পাড়ায় ব্যাক করে লাঞ্চ শেষ করে আমরা ডাবল-ফলস ঝর্ণা দেখার জন্য বেরিযে পরব। তিন ঘন্টার কিছুটা কম সময়ে আমরা চলে আসি জাদিপাই পাড়ায়। সেখানে একটি দোকানে বসে কিছুটা এনারজি নিয়ে আবার বেরিয়ে পড়ি। প্রায় ১ ঘন্টা ৩০ মিনিটস হার্ড ট্রেকিং শেষে আমরা পৌঁছে যাই আমাদের কাঙ্খিত প্লেস জাদিপাই। ঝর্ণায় চোখ পড়া মাত্র আমাদের সবার মনে হচ্ছিলো উই আর অন দা রাইট টাইম ইন রাইট প্লেস। উঁচু পাহাড় , পাহাড়ের বুক ধরে নেমে আসে স্বচ্ছ পানির ধারা। জাদিপাই এর সৌন্ধর্য উপভোগ করার মাঝেই আমরা বুঝে ফেলি আমরা বেশ লেট করে ফেলেছি আমাদের ট্রেকিং এর সময়। থাইক্ষ্যং পাড়া ব্যাক করে ডাবল ফলসে যাওয়া পসিবল হবে না। তাই ডিসাইড করি যতটা পারি জাদিপাই তাকেই উপভোগ করি। প্রায় ঘণ্টা খানেক থেকে আমরা আবার সেম রোড ধরে জাদিপাই পাড়ায় এসে খানিকটা রেস্ট নিয়ে থাইক্ষ্যং পাড়ার দিকে ব্যাক করি। বিকেলে পাড়ায় এসে ফ্রেশ হয়ে খানা শেষে আমরা পাড়ার ছেলেদের ভলিবল খেলা উপভোগ করছিলেম। রাত পর্যন্ত আড্ডা দিয়ে আবারো আরেকটি দিনের সমাপ্ত করি।
১৬.০৯.২০২২
সকাল সকাল উঠে পড়ি কারণ পারি দিতে হবে থানচি, ব্যাক করতে হবে ঢাকা । আসার দিনের নাইট ট্রেকিং এর ধকল আমাদের সবাইকে বেশ পেইন দিচ্ছিলো। বাট ফেরার পথের ট্রেকিং আমাদের মনেই হয় নি। মোটামুটি চিল করতে করতে ৩ ঘন্টার কিছুটা সময় নিয়ে চলে আসি বাকলাই। এবার গাইড এর তাড়াহুড়োর মাঝেও বাকলাই পাড়াটা ঘুরে দেখি। সামান্য কিছু পথ পারি দিয়েই আমাদের চাঁদের গাড়িতে উঠে পড়ি। আঁকাবাঁকা পথ পাড়ি দিয়ে থানচি চলে আসি। সবাই আমরা ফ্রেশ হয়ে টোটাল ৪ টা বাইক ভাড়া করে রওনা হই আলীকদম। থানচি টু আলীকদম এর বাইক রাইড খুবই এঞ্জয়েবল এন্ড রিলাক্সিং ছিল। পাহাড়ের উপর দিয়ে আঁকাবাঁকা আর উঁচু-নিচু রাস্তা থ্রিলিং ফিল দিচ্ছিলো।
আলীকদম পৌঁছে রাতের খাবার শেষ করে সন্ধ্যা ৭ টার বাসে আলীকদম থেকে ঢাকার দিকে ব্যাক করি ।
পাহাড়ের সৌন্দর্য আমাদের কখনই ডিসাপইন্ট করে না। তাই বার বার ছুটে চলি চিরচেনা বান্দরবানে । পরিবারের যদিও ধারণা বান্দরবান এ আমি বিয়ে করে আসছি। প্রতিটি সিজনে বান্দরবান তার রূপ চেঞ্জ করে কিন্তু সৌন্ধর্যের কোনো পরিবর্তন ঘটে না।