পহেলা ফেব্রুয়ারি ভোর ৪ টা। ঝিনাইদহ এর পায়রা চত্বর এ আমরা চার জন বাস থেকে নেমে পড়েছি। বান্ধবী অনুকে ফোন দিয়ে জেনে নেয়া হলো এবার কোথায় আসতে হবে। দুইটা অটো রিকশা নিয়ে আমরা চলে আসি স্টেডিয়াম এর ঠিক পিছনে। অনু আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলো না ঘুমিয়ে সারা রাত। রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে ছাদে হালকা আড্ডা দিয়ে রুমে ব্যাক করে ঘুমিয়ে পড়ি।
দশ পনেরো দিন আগে অনু আমাদের ওর বড় বোনের বিয়ের কথা জানায়। মজার ছলে বলেছিলাম যাচ্ছি তাহলে ঝিনাইদহ । সিরিয়াসলি আসলেই যাওয়া হবে এটা ভাবি নি। ঢাকা থেকে আমি , মুশফিক , মেহেদী , অর্ক একটা উবার কল করে প্রথমে চলে যাই গাবতলী বাস টার্মিনাল। বাস টিকেট কেটে বাস ছাড়ার ওয়েট করতে থাকি। রাত ১১ টার দিকে বাস ছাড়ে । আমি মোটামোটি বাস এ উঠেই হেডফোন কানে লাগিয়ে ঘুম। এই ঘুম এ চলে আসি আরিচা/পাটুরিয়া ঘাট। ফেরি তে বাস থেকে নেমে ফেরীর রুফ এ চলে আসি। এক কাপ কফি অর্ডার করি। ২৫ মিনিটের মতো ফেরিতে ছিলাম। এর পর আবার বাস এ উঠে আমার ঘুম। এই ঘুম এ এবার পৌঁছে যাই পায়রা চত্বর, ঝিনাইদহ এ।
১ তারিখ প্রমা আপু (অনু র বড় বোন ) সন্ধ্যায় গায়ে হলুদ। ২ তারিখে ওয়েডিং সেরেমনি। বিয়েতে মজা করা সহ আমাদের প্ল্যান ছিল ঝিনাইদাহ শহর ঘুরে দেখার। আমরা সকাল সকাল উঠে পড়ি. সকালের ব্রেকফাস্ট খেয়ে সবার সাথে মোটামোটি পরিচয় হয়ে শহর ঘুরতে বের হবো প্ল্যান করি। পরে অলসতা না কাটাতে পেরে রুমে বসে গল্প , গানে মেতে উঠি। বিকালের দিকে ঝিনাইদাহ শিল্পকলার পাশে নবগঙ্গা রিভার এ যাই একটু ঘুরে দেখতে।
সামান্য কিছু সময় বসে থেকে প্ল্যান করি অন্য কোথাও যাওয়ার। লোকাল কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করি আশেপাশে কোথায় যাওয়া যায়। বেশ কিছু অপসন থেকে আমরা আজকের জন্য বেঁচে নেই 'মিয়ার দালান' কে। ইজি বাইক ভাড়া করে চলে যাই মিয়ার দালান। মিয়ার দালান (Miyar Dalan) বাংলাদেশের ঝিনাইদহ জেলার সদর থানার মুরারীদহে অবস্থিত একটি পুরানো জমিদার বাড়ি। এটি ঝিনাইদহের একটি দর্শনীয় স্থান যা অনেকের কাছে সলিমুল্লাহ চৌধুরীর বাড়ি নামেও পরিচিত।
সন্ধ্যা হতে শুরু করেছে। তাই বেশি টাইম না নিয়ে সবাই মিলে কিছু ছবি তুলে আমরা ডিরেক্ট ফেরত চলে আসি। আজকের ঘুরার পর্ব এপর্যন্তই। বাসায় ব্যাক করে ফ্রেশ হয়ে সবাই হলুদ এর প্রোগ্রাম এর জন্য রেডি হয়ে নেই। স্টেজ ফটোসেশন চলছিল। আমরা ফ্রেন্ড রা সবাই মিলে একটা গ্রুপ ফটো নিয়ে নেই প্রমা আপুর সাথে। মাশাআল্লাহ আপুকে অনেক সুন্দর দেখাচ্ছিল। এরপর কালচারাল প্রোগ্রাম ।
হিসেবে নাচ , গান , ম্যাজিক এর আয়োজন ছিল। আমরা বাইরে এসে আমাদের মতো করে গান আড্ডা দিয়ে টাইম কাটাতে থাকি। রাতের ডিনার শেষে আমরা রুমে ব্যাক করি। রাত ৩ টা পর্যন্ত রুমে গানের আড্ডা আমাদের চলতে থাকে।
২ তারিখ, আজ প্রেমা আপুর বিয়ের প্রোগ্রাম। ঘুম থেকে উঠতে উঠতে ১১ টা বেজে যায়। উঠে একে একে সবাই শাওয়ার নিয়ে রেডি হই বিয়ের প্রোগ্রাম এর। দুপুর এক টার দিকে বের হয়ে অটো রিকশা নিয়ে চলে আসি Johan Dream Valley Park & Resort- Jhenaidah । স্পটটি বিশাল পার্ক হওয়ার জন্য আমরা বেশ এনজয় করি। ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকে। ছবি তুলতে থাকি।
সন্ধ্যায় ব্যাক করার টাইম এ পায়রা চত্বর এর কাছে আমরা চা খেতে নামি। এর পর রুমে গিয়ে রেস্ট নিয়ে রাতের ডিনার শেষে পরের দিনের প্ল্যান করি কোথায় ঘুরতে যাওয়া যায়। প্ল্যান শেষে রুমে ফিরে রাতে জমে উঠে গানের আড্ডা আর সাথে চলতে থাকে কার্ড খেলা।
৩ তারিখ সবাই সকাল সকাল উঠে পড়ি। ১১ তার দিকে ব্রেকফাস্ট শেষে পথে রওনা হই ঢোল সমুদ্র দিঘী (Dhol Samudra Pond ) . চারিদিকে গাছপালার মাঝে সুন্দর একটি দিঘী। ছোট্ট একটি নৌকো বাধা। তার সামনেই গোসল করছে কয়েকটা পিচ্চি। খুব আহামরি কিছু না হলেও এখানে বাতাসে একটা শান্তি ছিল। মনে হচ্ছিলো বসে এখানে সময় পার করে দেই।
এরপর যাই ১০০ বিঘা দিঘি তে (100 bigha dighi ) . সেখানে গিয়ে নৌকা নিয়ে ঘুরতে থাকি। ডিঙি চলতে চলতে পুকুরের মাছ ঝাঁপ দিয়ে শরীরের উপর চলে আসছিলো। প্রচণ্ড রোদ থাকায় আমরা নৌকায় বেশিক্ষন না থেকে ফিরে আসি।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর একটি ইজি বাইক পেয়ে বাইপাস হয়ে ফিরে আসি। লাঞ্চ শেষে রুমে রেস্ট নিয়ে আবার বিকালে বেরিয়ে পড়ি. ব্যাডমিন্টন খেলা দেখে নিজেকে থামাতে না পেরে দুই ম্যাচ খেলে শিল্পকলার দিকে রওনা হলাম। বড় আপুরা সবাই ফুসকা , চটপটির অর্ডার দিলো। নবগঙ্গা রিভার এর পার্ক এ কিছুটা সময় নিয়ে আবারো চলে যায় মুজিব চত্বর। কাবাব , চাপ খাই কাবাব ঘরে। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহীদ মিনার এই মুজিব চত্বরএ। লাস্ট ভিসিট হিসেবে দ্বিতীয় বৃহত্তম শহীদ মিনার (2nd Biggest Shahid Minar ) দেখে নেই।
১১:৩০ এ ছিল আমাদের বাস। রুমে এসে ব্যাগ রেডি করে ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নিয়ে সবার কাছে বিদায় নিয়ে ফিরে আসি ঢাকায়।
সময়টা খুব দীর্ঘ ছিল না. কিন্তু এই অল্প সময় মনে হচ্ছিলো মানুষ গুলো খুব কাছের। অনেক দিনের পরিচয় তাদের সাথে। পার্সোনাল উপলব্ধি থেকে ঝিনাইদাহ খুব ছোট শহর। এখানকার মানুষ জন পশু, পাখি প্রেমী।
বিকাল গুলোয় মানুষ জন তার পোষা প্রাণী নিয়ে বাইরে সময় কাটায়। নতুন শহরে পুরোনো মানুষের সাথে ঘুরে বেড়ানো ইস লাইক আই ওয়াস বর্ন হেয়ার।
Leave a comment
Your email address will not be published. Required fields are marked *