এবার ঈদে আমি আর আমার বন্ধু লিওন এর প্ল্যান ছিল লিওন এর বাইকে করে উত্তরবঙ্গ টুর দিবো। পরবর্তীতে অবশ্য ঈদ এর পর আমাদের প্ল্যান চেঞ্জ করে আমরা কিশোরগঞ্জ নিকলী , মিঠামইন এবং অষ্টগ্রাম যাওয়ার প্ল্যান করি।
০৪.০৭.২০২৩
জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জে বাজার থেকে আমরা আমাদের যাত্রা শুরু করি। তিন টা বাইকে টোটাল ৬ জন মিলে আমাদের যাত্রা শুরু হয় । সকাল ৮ টায় আমাদের যাত্রা শুরুর প্ল্যান ছিল। শেরপুর হয়ে প্রথমে মধুটিলা , গজনী ঘুরে তারপর নেত্তকোনার বিরিশিরি ঘুরে কিশোরগঞ্জ যাওয়ার প্ল্যান ছিল। বাট সকাল থেকে বৃস্টি হওয়ার জন্য যাত্রা শুরু করতে দেরি হয়। আমি বাদে বাকি সবাই রৌমারী থেকে ১১ তার পর রওনা দেয়। আমি জামালপুর থেকে ১২ টার দিকে রওনা দেই বকশীগঞ্জ বাজার এর উদ্দেশে। প্রায় এক ঘন্টা পর একটায় পৌঁছে যাই বাজারে। সেখান থেকে মূলত আমাদের যাত্রা শুরু হয়। ওয়েদার ক্লিন থাকার জন্য বাইকের জার্নি অনেক বেশি স্মুথ ছিল। ঘন্টা ২ পর পর আমরা বিরতি দিতে থাকি।
সন্ধ্যা ৬ টার দিকে আমরা কিশোরগঞ্জ চলে আসি। কিশোরগঞ্জ জেলার মুক্তমঞ্চে বসে চা খেতে খেতে আড্ডা দিতে থাকি কিছুটা ক্লান্তি দূর করার জন্য। আমাদের আজকের প্ল্যান কিশোরগঞ্জ শহরে এক রাত নাইট স্টে করে পরের দিন মিঠামইন, অষ্টগ্রাম এ যাওয়ার। শহরে কয়েকটি হোটেল দেখে আমরা একটি হোটেল ঠিক করে ফেলি। ফ্রেশ হয়ে রাতের ডিনার সেরে ফেলি। সবাই ভীষণ টায়ার্ড ছিলাম। ডিনার করে কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে সবাই রুম এ এসে ঘুম দেই । বাইক জার্নি রিলাক্সিং মনে হলেও ঠিক ততটা নয়।
০৫.০৭.২০২৩
সকাল ৯ টা বেজে ঘুম থেকে উঠে পড়ি। ফ্রেশ হয়ে এগারো টার দিকে বের হই মিঠামইন এর দিকে। মোটামোটি এক ঘন্টার একটি স্মুথ বাইক জার্নি শেষে চলে আসি যদি ঘাট এ। কেক , চা খেয়ে প্রথমে আমরা নৌকা ভাড়া করি জনপ্রতি ৭০ টাকা এবং বাইক ১৫০ টাকা। রিভার জার্নি এর এই টাইম টা এনজয় করে এক ঘন্টার কিছুটা কম সময়েই চলে আসি মিঠামইন বাজার এ। সবাই সবার বাইক ঠিক ভাবে নামিয়ে এবার মিঠামইন , অষ্টগ্রাম রোড ফীল করার পালা।
চারপাশে নদী মমাঝখানে রোড। অসম্ভব সুন্দর একটা দৃশ্য। আজকের আকাশ টা একদম দেখার মতো ছিল। মিঠামইন রোড এর চারপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে মাঝপথে দাঁড়িয়ে আমরা কিছু পার্সোনাল ফটো এন্ড গ্রুপ ফটো তুলে ফেলি। এবার অষ্টগ্রাম এ যাওয়ার পালা। চারপাশে যেদিকে চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। পানির মাঝেই সুন্দর সুন্দর বাড়িগুলো ভেসে আছে , জেলেদের মাছ ধরায় ব্যস্ততা , ছোট ছোট নৌকায় মানুষদের যাতায়াত। সব মিলিকে পুরো দৃশ্য চোখে পড়ার মতো। বাইকে ১০০ km /h এর কাছাকাছি টান দিয়ে খুবই কম সময়ের মাঝে চলে আসি অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট এ। অষ্টগ্রাম বাজার এ গিয়ে আমরা আমাদের দুপুরের লাঞ্চ সেরে নেই। হাওর এরিয়া হিসেবে খাবার এর কোয়ালিটি এবং দাম খুবই বাজে ছিল।
আমার আর লিওন এর প্ল্যান নিকলী হয়ে ঢাকায় ব্যাক করা। বাকিদের সিলেট যাওয়ার প্ল্যান ছিল। সেম রোড দিয়ে এবার আমরা ব্যাক করতে স্টার্ট করি। মিঠামইনা বাজারের সামনেই ছিল রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এর বাসা। সেখানে কিছুটা সময় নিয়ে আমরা ঘাটের দিকে চলে আসি। বাকিরা কিশোরগঞ্জ হয়ে তারপর সিলেট যাবে। নৌ ঘটে এসে নিকলির একটু ট্রলার ভাড়া করি। প্রায় এক ঘন্টার কিছুটা বেশি টাইম পরে পৌঁছে যাই নিকলী।
সময় আনুমানিক ৬ টা। যেহেতু ঢাকায় ব্যাক করতে হবে এবং সন্ধ্যা হতে আর বেশি নেই। তাই টাইম ওয়েস্ট না করে ঢাকার রোড এ রওনা হতে শুরু করি। আমাদের টার্গেট ছিল নরসিংদী এসে একদম চা বিরতি নিবো। সন্ধ্যার পর এই বাইক জার্নি টা বেশ এডভেঞ্চার ছিল। ম্যাপ না দেখে মোড়ে মোড়ে আস্ক করে আমরা নরসিংদী চলে আসি। সেখানে বাইকে লিওন অকটেন নিয়ে কিছুটা চা এর বিরতি দিয়ে আবার শুরু করি আমাদের জার্নি। মাঝপথে চা এর বিরতি দিয়ে আস্তে আস্তে আমরা ঢাকার কাছাকাছি চলে আসি। কাঞ্চনব্রীজ এসে লং একটা বিরতি নেই। তারপর ৩০০ ফিট রোড দিয়ে চলে আসি বসুন্ধরা।
প্রথম বারের মতো আমার বাইক ট্যুর ছিল। অন্যরকম এক ফিলিং। পুরো জার্নি টা ছিল বেশ স্মুথ এবং উপভোগ্য। ধন্যবাদ লিওন , পল্লব , মামুন , মন্ডল এতো সুন্দর একটা প্ল্যান করার জন্য।